রাজগঞ্জ বধ্যভূমি ও গনকবরের স্থানটি আজ ময়লার ভাগাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২১ ০৯:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২১ ০৯:০০

ছবি সমসাময়িক
শহিদুজ্জামান মিলন।। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে এক বিভীষিকাময় রাত। ঘুমন্ত ,নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালিদের উপর পাকিস্তানি ঘাতকের দল সেদিন নির্মম হত্যাযোগ্য চালায়। তাদের সেই নিষ্ঠুরতা রাজধানী থেকে ক্রমশ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অসহায় নারী পুরুষ শিশু ও বুদ্ধিজীবি নিধনের নিমিত্তে পরিকল্পনা মাফিক এগোতে থাকে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী। এদিকে মুক্তিকামী বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ দল বেঁধে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে থাকে। যশোরের মনিরামপুর উপজেলা ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ঝাঁক বেঁধে সব ভারতে পাড়ি দিতে থাকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। মনিরামপুরের রাজগঞ্জ,ঝাঁপা,মল্লিকপুর,ডুমুরখালী,ষোলখাদা এ অঞ্চলে গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৫০ জন ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও ২৫০ জন স্থানীয় ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মোট ৪০০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গড়ে তোলা হয় শক্তিশালী ফজলু বাহিনী।ফজলু বাহিনী কপোতাক্ষ পাড়ের এ অঞ্চলটিকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজাকারের দল এ খবর পাকিস্তানি ক্যাম্পে জানিয়ে দেয়। তারপরেই রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তারা রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন।যেখানে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ,নারী, স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের ধরে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। সাম্প্রতিক রামনাথপুর গ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক বিমল হাজরা সেই নির্যাতনের কথা বর্ণনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলেন।তিনি গোপনে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন ।সে খবর দ্রুত রাজাকার ক্যাম্পে চলে যায়। তারপর একদিন দুপুরে তিনি বাড়িতে যায় মায়ের সাথে দেখা করতে।অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনী তার বাড়ী ঘিরে ফেলে এবং তাকে তুলে আনা হয় রাজগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্পে। রাইফেলের বাট দিয়ে তার বুকে আঘাত করা হয়, হাত দিয়ে ঠেকাতে গিয়ে তার হাতের আঙুল ফেটে যায়। অমানুষিক নির্যাতন চলতে থাকে তার উপর,হাত পা বেঁধে বাইরে ফেলে রাখা হয় বুকের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়া হবে, এমন সময় তার মা এসে স্থানীয় রাজাকার আফসার,মেহের , পাকিস্তানি এক সেনা মেজর আমীন তাদের হাতে পায়ে ধরে তাকে ছাড়িয়ে আনে। কপোতাক্ষ পাড়ের এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা আশে পাশে বিভিন্ন গ্রামে গোপনে রণকৌশল ঠিক করতো। বিভিন্ন বাড়িতে মাঝে মাঝে খাওয়া দাওয়া ও রাত্রি যাপন করতো।রাজগঞ্জের কোমলপুর গ্রামের মিস্ত্রী পাড়ার মিষ্টি ব্যবসায়ী শহীদ হাজারী লাল সরকারের বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচল ছিল। খবর পেয়ে ১৩৭৮ সালের ১লা কার্তিক মঙ্গলবার দুপুর বেলা মিস্ত্রী পাড়ায় হামলা করা হয়।হাজারী লাল সরকার ,তার ছেলে পরিতোষ সরকার,ভাই রামপদ সরকার পাশের বাড়ির মৃত দ্বিজবর সিংহ এর তিন ছেলে জ্ঞানেন্দ্রনাথ ,হরেন্দ্রনাথ,নরেন্দ্রনাথ ও ভাই নিতাই পদ সহ মোট সাত জনকে ধরে নিয়ে রাজগঞ্জ মাছ বাজারের কাছে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোগ নিয়ে তাদের লাশ গুলো ঝাঁপা বাওড়ের ধারে চাপা মাটি দেয়। দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এই নিরীহ মানুষ গুলো আজো শহীদের মর্যাদা পায় নি। তাদের পরিবারকেও দেয়া হয়নি প্রাপ্ত সন্মান। এমনকি গনহত্যার স্থানটি সংরক্ষণের কোন যথামত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।স্থানটি এখন ময়লার ভাগাড়। বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা,মাছ ব্যবসায়ীরা, তরকারি ব্যবসায়ীরা ডাষ্টবিন হিসাবে ব্যবহার করে জায়গাটা।তাছাড়া তাদের গণকবরের পাশে মনিরামপুরের প্রায়াত সাংসদ খান টিপু সুলতানের উদ্যোগে একটি স্মৃতি ফলক করলেও বর্তমানে সেটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন বলেন বধ্যভূমি ও গণকবরের স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা প্রক্রিয়াধীন।তবে কবে নাগাদ হবে তা কারো জানা নেই। লেখক, শিক্ষক, রূপদিয়া শহীদ স্মৃতি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সদর যশোর।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: