স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও মনিরামপুরে বদ্ধভূমি সংরক্ষণে এগিয়ে আসেনি রাষ্ট্রিয় কোন উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২০ ১৮:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২০ ১৮:০৬

ছবি সমসাময়িক
 

স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর)।। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও যশোরের মনিরামপুরে হরিহর নদীর তীরে অবস্থিত বদ্ধভূমিটির কোন উন্নয়ন করা হয়নি। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রিয়ভাবেও নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। তবে প্রতিবছর ২৩ অক্টোবর) বদ্ধভূমিতে ”শহীদ বিপ্লবী স্মৃতি রক্ষা” কমিটির উদ্যোগে পালন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। শহীদ বিপ্লবী স্মৃতি রক্ষা কমিটিসহ মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি রাষ্ট্রীয়ভাবে বদ্ধভূমিটি সংরক্ষণ করে পার্শ্ববর্তিস্থানে একটি শিশু পার্ক নির্মানের। ১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর পাকহানাদার বাহিনীর হাতে স্বাধীনতাকামী পাঁচ সূর্য্য সন্তান শহীদ হন এখানে। এর মধ্যে আশিকুর রহমান তোজো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন ছাত্র ছিলেন।

সে যশোরের প্রক্ষাত আইনজীবি সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাষানীর ঘনিষ্ট সহচর অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমানের ছেলে। আসাদুজ্জামান আসাদ ছিলেন যশোরের এমএম কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি। সিরাজুল ইসলাম শান্তি ছিলেন জেলা কৃষক সংগ্রাম সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক। আহসান উদ্দিন খান মানিক ছিলেন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের(মেনন) সভাপতি এবং ফজলুর রহমান ছিলেন মেধাবী ছাত্র। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন ২৩ অক্টোবর সকালে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রত্নেস্বরপুর গ্রামে রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী মোট ছয় যুবক। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের চোখ এড়াতে পারেনি এরা। স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার মালেক ডাক্তারের নেতৃত্বে ইসাহাক, মেহের জল্ল¬াদ, আবদুল মজিদ সহ বেশ কয়েকজন রাজাকার সেখান থেকে আটক করে ওই ছয় জনকে। এর পর তাদেরকে চোখ বেঁধে চিনাটোলা বাজারের পূর্বপাশে হরিহরনদীর তীরে আনা হয়। চালানো হয় তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের শরীরে ছিটিয়ে দেয়া হয় লবন। নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে এখনও কালেরসাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন চিনাটোলার শ্যামাপদ নাথ(৮১)। শ্যামাপদ নাথ সেদিন ছিলেন ২৫/২৬ বছরের টগবগে যুবক। শ্যামাপদ সেসময় মুটেগিরি করতো। রাজাকারদের নির্দেশে ওইদিন শ্যামাপদ হরিহরনদীর ওপর ব্রিজ পাহারার দায়িত্ব পান। তিনি জানান,ওই দিন রাত ৮ টার(২৩ অক্টোবর,১৯৭১) দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মুক্তিসেনা আসাদ, তোজো, শান্তি, মানিক, ফজলুসহ ছয় যুবককে ব্রিজের পাশে আনা হয়। এর পর পরই তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় সৈয়দ মাহ্মুদপুর গ্রাম সংলগ্ন হরিহরনদীর তীরবর্তি স্থানে। কিন্তু আটক ছয় জনের মধ্যে ১২/১৩ বছর বয়সী এক কিশোর নদীতে ঝাপ দিয়ে পালিয়ে যায়। এর পরপরই রাজাকার কমান্ডারের বাঁশি বেঁজে উঠার সাথে সাথে গর্জে ওঠে রাইফেল। মুহুর্তের মধ্যে পাঁচ তরতাজা যুবকের নিথরদেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বর্বর এই হত্যাকান্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী শ্যামাপদ নাথ আরো জানান, নদীর তীরে যেখানে তাদের হত্যা করা হয়, পরদিন সকালে তিনি(শ্যামাপদ)এবং স্থানীয় আকব্বর আলী সেখানে তাদেরকে সমাহিত(কবর) করেন। শ্যামাপদ সেই পাঁচ সূর্য্য সন্তানের বর্বর হত্যাকান্ডের স্মৃতি আজো ভুলতে পারেনি। তার আক্ষেপ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও পাঁচ শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে এ বদ্ধভূমির কোন উন্নয়ন করা হয়নি। শহীদ বিপ্লবী স্মৃতিরক্ষা কমিটির আহবায়ক উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টি(মার্কসবাদ)র সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমরেড গাজী আবদুল হামিদ জানান, রাষ্ট্রীয়ভাবে বদ্ধভূমিটি সংরক্ষণের পর পার্শ্ববর্তিস্থানে একটি শিশু পার্ক নির্মান করার দাবি তাদের। কারন বদ্ধভূমির পাশেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান গড়ে তুলেছেন একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুল। চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, স্কুলের পাশে বদ্ধভূমি সংলগ্ন স্থানে শিশু পার্ক থাকলে শিক্ষার্থীদের ভেতর দেশপ্রেম আরো প্রানচাঞ্চল্য হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: